মানবদেহে যাবতীয় কাজে রাসায়নিক সমন্বয়কারী (Chemical coordination) হিসেবে হরমোন (hormone) নামক এক জৈব রাসায়নিক পদার্থ ভূমিকা পালন করে। হরমোন উৎপন্ন হয় প্রধানত এক বিশেষ গ্রন্থিতন্ত্র থেকে। ক্ষরণ গুণসম্পন্ন একটি মাত্র কোষ বা কোষগুচ্ছ নিয়ে গঠিত হয় গ্রন্থি (gland)। মানবদেহের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত নানা ধরনের অসংখ্য গ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হয়ে যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনা করে।
গঠন ও কার্যগতভাবে বিশেষায়িত যে কোষ বা কোষগুচ্ছ দেহের বিভিন্ন জৈবনিক প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে, তাকে গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড বলে। গ্রন্থি এক ধরনের রূপান্তরিত আবরণী টিস্যু। ক্ষরণ পদ্ধতি ও ক্ষরণ নির্গমন নালির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে গ্রন্থি দুধরনের-
* বহিঃক্ষরা বা সনাল গ্রন্থি (Exocrine Glands):
যে সব গ্রন্থি নিজের ক্ষরিত রাসায়নিক পদার্থ নালিকার মাধ্যমে উৎপত্তিস্থলের অদূরেই বহন করে, সেগুলোকে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। বহিঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণকে রস বা জুস (juice) বলে। যেমন- লালাগ্রন্থি, যকৃত, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি গ্রন্থি।
* অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি (Endocrine Glands) :
যে সব গ্রন্থি নালিবিহীন, তাই ক্ষরণ সরাসরি রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে বাহিত হয়ে দূরবর্তী সুনির্দিষ্ট অঙ্গে ক্রিয়াশীল হয়, সে সব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অনাল গ্রন্থি (dustless gland) বলে। উদাহরণ- পিটুইটারি, থাইরয়েড, অ্যাড্রেনাল ইত্যাদি গ্রন্থি। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণকে হরমোন বলে।
অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থির মধ্যে পার্থক্য
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি | বহিঃক্ষরা গ্রন্থি |
---|---|
মানবদেহে নালিবিহীন গ্রন্থিসমূহকে অন্তঃক্ষরা বলে। | মানবদেহে নালিযুক্ত গ্রন্থিসমূহকে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। |
নিসঃরণ: এসব গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত পদার্থের নাম হরমোন। | এসব গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত পদার্থের নাম রস, জুস, এনজাইম । |
পরিবহন: রক্তে পরিবাহিত হয়। | নালির মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। |
ক্রিয়াস্থল : হরমোন দূরবর্তী টার্গেট স্থলে কাজ করে। | এটি নিকটবর্তী বা দূরবর্তী উভয় টার্গেট স্থলে কাজ করে। |
উদাহরণ: পিটুইটারি গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ইত্যাদি। | যকৃত, অগ্ন্যাশয়, লালাগ্রন্থি ইত্যাদি |
অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি (Endocrine Glands)
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হরমোন নামক জৈব রাসায়নিক দ্বার্থ উৎপন্ন করে। এটি নালিবিহীন গ্রন্থি হওয়ায় হরমোন সরাসরি রক্তপ্রবাহে ক্ষরিত হয়। এসব গ্রন্থি রক্তবাহিকা-সমৃদ্ধ জালিকায় পরিবৃত থাকে। কিছু গ্রন্থি আছে যা একাধারে অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। অগ্ন্যাশয় এমনি একটি গ্রন্থি। এ গ্রন্থির কিছু বিশেষিত কোষ থেকে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন উৎপন্ন ও রক্তে ক্ষরিত হয়। অন্যদিকে, এ গ্রন্থি থেকেই প্যানক্রিয়াটিক জুস (অগ্ন্যাশয়িক রস) উৎপন্ন হয়ে অগ্ন্যাশয়িক নালিতে বাহিত হয়ে অন্ত্রে পৌছায়।
নামকরণ : অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র সম্পর্কিত বিজ্ঞানের সূত্রপাত বেশ আগে থেকেই। এ বিদ্যার সূত্রপাত চীনদেশে। সেখানে খৃষ্টপূর্ব ২০০ সালে অভিনব উপায়ে মানুষের মূত্র থেকে যৌন ও পিটুইটারি হরমোন সংগ্রহ করে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হতো। তবে সুনির্দিষ্টভাবে হরমোন (সিক্রেটিন) শনাক্ত করেন ১৯০২ সালে দুই ব্রিটিশ শারীরতত্ত্ববিদ william Bayliss এবং Emest Starling। তাঁরা ১৯০৫ সালে এ রাসায়নিককে হরমোন নামে অভিহিত করেন। গ্রিক শব্দ hormao (to excite = উদ্দীপ্ত/ উত্তেজিত করা) থেকে হরমোন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। হরমোন দেহের রাসায়নিক দূত (chemical messenger) হিসেবে সুপরিচিত।
হরমোনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-
• হরমোন এক ধরনের ক্ষুদ্র জৈব অণু।
• হরমোন রক্তে বাহিত হয়।
• উৎপত্তিস্থল থেকে (নির্দিষ্ট কোষ বা কোষগুচ্ছ বা গ্রন্থি থেকে) সংবহনতন্ত্রের মাধ্যমে দেহের দূরবর্তীস্থানে পরিবাহিত হয়ে নির্দিষ্ট অংশে (target) কাজ করে।
• হরমোন এক ধরনের দ্রবণীয় জৈব অনুঘটকের কাজ করে কিন্তু কাজ শেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
হরমোন স্বল্প মাত্রায় বা ঘনত্বে কার্যকর হয় এবং ক্রিয়ার স্থায়িত্বকাল অনেকদিন বজায় থাকে।
• হরমোন সাধারণত ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকে না।
• অধিকাংশ হরমোনের ক্রিয়া ধীরে সংঘটিত হয়।
• একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে একাধিক হরমোন ক্ষরিত হতে পারে কিন্তু এগুলোর কাজ বা ক্ষরণ পরস্পর নির্ভরশীল নয়।
• স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক রেখে হরমোন বিভিন্ন দৈহিক ও শারীরবৃত্তিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
• হরমোন জীবদেহের কোষে কোষে রাসায়নিক সংযোগ সাধন করে এবং রাসায়নিক বার্তা প্রেরণ করে।
অন্তঃক্ষরা বা এন্ডোক্রিন গ্রন্থির অবস্থান, নিসঃরণ ও ক্রিয়া (Position, Secretion and Functions of Endocrine Glands)
হরমোন শুধু অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোষ থেকে নয় বরং দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অবস্থিত কতকগুলো বিশেষায়িত কোষ থেকেও নিঃসৃত হয়।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলো হলোঃ
ক. পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary gland)
পিটুইটারি গ্রন্থিকে হরমোন সৃষ্টিকারী প্রধান গ্রন্থি বা প্রভু গ্রন্থি (Principal/Master gland) বলে। কারণ একদিকে, গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের সংখ্যা যেমন বেশি, অন্যদিকে বিভিন্ন গ্রন্থির উপর এসব হরমোনের প্রভাবও বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী কিন্তু সবচেয়ে ছোট গ্রন্থি।
অবস্থান ও আকৃতি : এ গ্রন্থি চোখের পিছনে মস্তিষ্কের পাদদেশে একটি ক্ষুদ্র বৃন্তের সাহায্যে যুক্ত থাকে। পিটুইটারি গ্রন্থি প্রায় ১ সে.মি. ব্যাস সম্পন্ন লালচে ধূসর, দেখতে মটর দানার মতো, ০.৫ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট একটি গ্রন্থি।
পিটুইটারি গ্রন্থি ৩টি খন্ডে বিভক্ত, যথা-
ক. সম্মখ পিটুইটারি গ্রন্থি (Anterior pituitary gland) : এ গ্রন্থি থেকে ৬টি ট্রপিক হরমোন (tropic hormone) ক্ষরিত হয়। যে হরমোন অন্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে তার হরমোন ক্ষরণে উদ্বুদ্ধ করে সেগুলো হচ্ছে ট্রপিক হরমোন। এমন ৬টি ট্রপিক হরমোন সম্মুখ পিটইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন ও জমা হয় এবং প্রয়োজনে রক্তবাহিকায় ক্ষরিত হয়ে সারা দেহে প্রভাব বিস্তার করে।
১. বৃদ্ধিপোষক হরমোন (Somatotropic Hormone, STH) : অস্থি ও কোমল টিস্যুর বৃদ্ধি, প্রোটিন সংশ্লেষ, গ্লাইকোজেনের সঞ্চালন ও চর্বি সঞ্চয়কে উদ্দীপ্ত করে।
২. থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন (Thyroid Stimulating Hormone, TSH বা Growth Hormone, GH): থাইরয়েড গ্রন্থিকে থাইরয়েড হরমোন সংশ্লেষ ও ক্ষরণে উদ্দীপ্ত করে।
৩. লুটিনাইজিং হরমোন (Luteinizing Hormone, LH) : নারীদেহে ডিম্বপাত, কর্পাস লুটিয়াম সৃষ্টি, এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন সংশ্লেষকে উদ্দীপ্ত করে। পুরুষে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণেও LH উদ্দীপ্ত করে।
৪. ফলিকল উদ্দীপক হরমোন (Follicle stimulating Hormone, FSH) : এর প্রধান কাজ হচ্ছে নারীদেহে ডিম্বাশয়ে ফলিকলের পূর্ণতা বা পরিপক্কতা দান করা এবং ইস্ট্রোজেন সংশ্লেষে উদ্দীপনা যোগানো।
৫. প্রোল্যাকটিন (Prolactin, PRL) : সম্মুখ পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত এ হরমোনের প্রভাবে স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি, দুগ্ধ উৎপাদন, অনাক্রম্যের প্রতি সাড়াদান, সন্তানের প্রতি বাৎসল্য ও পরিস্ফুটনের সময় নতুন রক্তকণিকা সৃষ্টিতে অবদান রাখে।
৬. অ্যাড্রেোনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন (Adrenocorticotropic Hormone, ACTH): অ্যাড্রেনাল কর্টেক্সকে গ্লুকোকর্টিকয়েড (যেমন- কর্টিসল) স্টেরয়েড হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপ্ত করে।
খ. মধ্য পিটুইটারি গ্রন্থি (Middle pituitary gland) : এ গ্রন্থি থেকে মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন (Melanocyte Stimulating Hormone – MSH) নিঃসৃত হয়। এ হরমোন মেলানোফোর কোষের বিস্তৃতি ঘটিয়ে ত্বক ও চুলের বর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে।
গ. পশ্চাৎ পিটুইটারিটারি গ্রন্থি (Posterior pituitary gland) : এ গ্রন্থি থেকে দুটি হরমোন নিঃসৃত হয়।
১. অক্সিটোসিন (Oxytocin) হরমোন : স্তনের পেশি সংকোচন ঘটিয়ে দুগ্ধ ক্ষরণে সাহায্য করে ও প্রসবের সময় জরায়ুর সংকোচন তুরান্বিত করে।
২. ভ্যাসোপ্রেসিন (Vasopressin) বা অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন (Anti Diuretic Hormone- ADH) : রক্তচাপ বৃদ্ধি করে ও বৃক্কের পানি শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়।
খ. থাইরয়েড গ্রন্থি (Thyroid gland)
অবস্থান ও আকৃতি : ট্রাকিয়ার (শ্বাসনালি) উভয় পাশে অবস্থিত। প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি।
নিঃসরণ : এ গ্রন্থি থেকে নিচে বর্ণিত ৩টি সক্রিয় হরমোন নিঃসৃত হয়।
১. ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (Triiodothyronin, T3) : মৌলিক বিপাক হারকে উদ্দীপ্ত ক প্রোটিন সংশ্লেষ ও প্রোটিন বিনাশ, গ্লুকোজ সংশ্লেষ, লাইপোলাইসিস প্রভৃতির হার বৃদ্ধি করে। এ হরমোন ভ্র্র্রূণ ও শিশুর পরিস্ফুটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. থাইরক্সিন (Thyroxine, T4) : বিপাকীয় প্রক্রিয়ার হারকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ হরমোন , প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে দৈহিক বৃদ্ধি নির্ধারণ করে। এ হরমোন প্রোটিন সংশ্রেয়।
৩. ক্যালসিটোনিন (Calcitonin, CT) : এটি অস্থি থেকে Ca2+ রক্তে স্থানান্তরে বাধা দেয়ার মাধ্যমে মাত্রা কমায়; বৃক্ককে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দিয়ে মূত্রের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম মোচন করিয়ে রক্তে এর সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে; হাড়ে ক্যালসিয়াম সঞ্চয়ের মাধ্যমে রক্তে Ca2+ এর মাত্রা ঠিক রাখে ।
গ. প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি (Parathyroid gland)
অবস্থান : দুজোড়া প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থাইরয়েড গ্রন্থির পিছনে এবং আংশিকভাবে থাইরয়েডের মধ্যে অবস্থিত
নিঃসরণ : প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনটি প্যারাথাইরয়েড হরমোন (Parathyroid Hormone, PTH) বা প্যারাথরমোন (Paratharmone) বা প্যারাথাইরিন (Parathyrin) নামে পরিচিত।
ক্রিয়া : রক্তে Ca2+ এর পরিমাণ কমে গেলে। প্যারাথরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। PTH নিম্নোক্ত উপায়ে রক্তে Ca2+ এর পরিমাণ বাড়ায়।
PTH সরাসরি অস্থি থেকে Ca2+ কে রক্তে স্থানান্তর করার মাধ্যমে Ca2+ এর পরিমাণ বাড়ায় ।
বৃক্কের ডিস্টাল টিউবিউল-এ Ca2+ এর পুনঃশশাষণ বাড়ায়।
বৃক্কে Vitamin D3 কে সক্রিয় করে 1, 25 ডাই হাইঅক্সি কোলেক্যালসিফেরল এর রূপান্তর করে যা অন্ত্রে ক্যালসিয়াম এর শোষণ বাড়ায়। স্নায়ু উদ্দীপনা প্রবাহে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম । তাছাড়া পেশির সংকোচন ও রক্ত জমাট বাঁধায়ও ক্যালসিয়ামের সঠিক মাত্রা প্রয়োজন রক্তে ফসফেটের মাত্রা কমিয়ে দিতে এবং ভিটামিন D-কে সক্রিয়করণে প্যারাথরমোন ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন D-র অভাবে বাচ্চাদের রিকেটস (rickets) রোগ দেখা দেয়। বয়স্কদের হয় অস্টিওম্যালাসিয়া (osteomalacia)।
ঘ. অ্যাড্রেনাল বা সুপ্ৰারেনাল গ্রন্থি (Adrenal or Supra-renal gland)
অবস্থান ও আকৃতি : প্রতিটি বৃক্কের মাথায় টুপির মতো একটি করে মোট দুটি। গ্রন্থির বাইরের হলুদ অংশকে কর্টেক্স (cortex) এবং ভিতরের পিঙ্গল বর্ণের অংশকে মেডুলা (medulla) বলে। এদের ওজন ৩-৫ গ্রাম।
নিঃসরণ : অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির উভয় অংশ থেকেই হরমোন নিঃসৃত হয় এবং এদের কাজও ভিন্ন।
কর্টেক্স নিঃসূত হরমোন (Hormones secreted from cortex)
অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স থেকে তিন ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। যথা-
১. গ্লুকোকর্টিকয়েড (Glucocoticocids) : শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে ।
২. মিনারেলোকর্টিকয়েড (Mineralocorticoids) : খনিজ লবণের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. যৌন কর্টিকয়েড (Sex hormone) : অ্যাড্রোজেন, ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক যৌন হরমোনগুলো বর্ধন ও যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে।
মেডুলা নিঃসৃত হরমোন (Hormones secreted from medula)
আড্রেনাল মেডুলা থেকে ৩টি হরমোন নিঃসৃত হয়।
১. অ্যাড্রেনালিন (Adrenalin) : এর অপর নাম এপিনেফ্রিন (Epinephrine)। যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন থেকে গ্লুকোজ অবমুক্ত করে বিপাকের হার বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া হৃৎপিণ্ড ও ধমনির অনৈচ্ছিক পেশির সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে ভয়, আনন্দ ও শোক প্রকাশে বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
২. নর অ্যাড্রেনালিন (Nor adrenalin) : এর অপর নাম নর এপিনেফ্রিন (Nor epinephrine)। দেহের অতিরিক্ত গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এর কাজ।
৩. ডোপামিন (Dopamine) : এটি নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে।
ঙ. থাইমাস গ্রন্থি (Thymus gland)
বক্ষদেশে, হৃৎপিণ্ডের ঠিক উপরে এ গ্রন্থি অবস্থিত। ভ্রূণ অবস্থায় এর কাজ শুরু হয় এবং জন্মের সময় এবং জন্মের পরপরই সবচেয়ে সক্রিয় থাকে, মায়ের বুকের দুধ ভিন্ন অন্য খাবারে অভ্যস্থ হবার পরপরই এটি হ্রাস পেতে শুরু করে। ইম্যুন রেসপন্স (immune response) বিকাশে এ গ্রন্থি গুরুত্বপূর্ণ। এ গ্রন্থি বেশ কয়েকটি থাইমিন হরমোন (যথা- থাইমোসিন আলফা) তৈরি করে যা থাইমাসে T-কোষ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
চ. অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স (Islets of Langerhans in Pancreas)
আকৃতি ও অবস্থান : অগ্ন্যাশয় একটি মিশ্রগ্রন্থি। বহিঃক্ষরা অংশের মধ্যে কিছু কোষ একত্রিত হয়ে বিক্ষিপ্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাপের মত কতক কোষগুচ্ছ একেকটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি সৃষ্টি করে। এগুলো আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স। আবিষ্কারক ’auel Langerhans (1869) এর নামানুসারে এ কোষগুচ্ছ “আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস” নামে পরিচিত। এসব গ্রন্থিকোষের সম্মিলিত আয়তন মোট অগ্ন্যাশয় আয়তনের ১-২% । প্রতিটি দ্বীপগ্রন্থির কোষ দানাদার, বহুভূজাকার ও ক্তিবাহিকা সম্বলিত । আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স চার ধরনের কোষে গঠিত। এটির ̶
• আলফা কোষ থেকে গ্লুকাগন
• বিটাকোষ থেকে ইনসুলিন
• ডেল্টা কোষ থেকে সোমাটোস্ট্যাটিন হরমোন নিঃসৃত হয়
• PP কোষ থেকে প্যানক্রিয়েটিক পলিপেপটাইড ক্ষরিত হয়
কাজ :
• ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ হ্রাস করে।
• ইনসুলিনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস রোগ হয়।
• গ্লুকাগন দেহে সঞ্চিত গ্রাইকোজেন ভেঙ্গে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
• গ্লুকাগন দেহে সঞ্চিত গ্রাইকোজেন ভেঙ্গে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
• সোমাটোস্ট্যাটিন, ইনসুলিন ও গ্লুকাগনসহ বিভিন্ন অগ্ন্যাশয়িক হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
• প্যানক্রিয়েটিক পলিপেপটাইড হরমোনের কাজ হলো খাদ্য গ্রহণের পর ক্ষরিত হয়ে ক্ষুধা হ্রাস করে।
ছ. গোনাড বা জননাঙ্গ (Gonad)
জননকোষ উৎপাদনকারী অঙ্গকে গোনাড বা জননাঙ্গ বলে। গোনাড দু’ধরনের- শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়। এগুলো অস্থিরূপী অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নয় কিন্তু এসব অঙ্গের অভ্যন্তরীণ কিছু টিস্যু অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। পুরুষ ও নারীদেহে যথাক্রমে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় রয়েছে।
আরও দেখুন...